বিল্লাল হোসেন প্রান্তঃ
ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চক শ্যামরামপুর ও দড়িকুষ্টিয়ায় গুষ্ঠিগত বিরোধ চরমে উঠেছে। গত ৭ মাসে পাল্টাপাল্টি ১০ মামলা হলেও একজন আসামিকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। উপরন্তু মামলা তুলে নিতে চক শ্যামরামপুর গ্রামের বাদী পক্ষের অবশিষ্ট দেড় একর জমির ধান আটকে রেখেছে আসামিরা। সূত্রমতে,দড়িকুষ্টিয়ার আসামিদের বাড়ির কাছে বাদীর জমির ধান আটকে রেখে মীমাংসার চাপ চলছে বিভিন্ন মহল থেকে।
ময়মনসিংহের ২নং দড়িকুষ্টিয়া গ্রামের একটি প্রভাবশালী গুষ্ঠির অত্যাচারে পরাণগঞ্জ ইউনিয়নের চক শ্যামরামপুরে ভুক্তভোগী কৃষক পরিবারে চলছে স্থবিরতা। গত ৭ মাসে তাদের পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে দড়িকুষ্টিয়ার লোকজন। এমনি তাদের ৭০ একর জমির ধান, পাট, মরিচ, পিয়াজ, কড়লা ইত্যাতি মৌসুমী ফসল গরু দিয়ে খাইয়ে, কেটে নষ্ট করে ও তুলে নিয়ে যাওয়ায় ৭ টি মামলা দায়ের করে। যাতায়েত ব্যবস্থা খারাপ থাকার যুক্তিতে পুলিশের নির্বিকার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে!
এ বিষয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার নবাগত ওসি মোঃ ফিরোজ তালুকদার বলেছেন অপরাধ কমানোর লক্ষেই মামলাগুলো নেয়া হয়েছে। দুপক্ষের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
তবে বাদীপক্ষ নবাগত ওসির বক্তব্যে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতীকে স্বাগত জানিয়েছেন। যা থেকে তারা বিগত ৭ মাস বঞ্চিত। বাদী পক্ষের দাবি মিমাংসা নয়, তদন্তপূর্বক বিচারের মাধ্যম আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক, আইনী প্রক্রিয়ায়।
ঘটনার সূত্রপাতঃ
গত বছরের ২১ নভেম্বর সেচ মটর চুরির দায়ে একই গ্রামের উমেদ আলীর ছেলে নাজিরুলসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা দেন চক শ্যামরামপুরের কৃষক হারুন অর রশিদ । তবে একইদিন মারামারির অভিযোগ এনে কাউন্টার মামলা দেন উমেদ আলী। এঘটনায় স্থানীয়ভাবে আপোষ মীমাংসার নামে কৃষক হারুনের কাছ থেকে ১লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। ঘটনার সূত্রপাত সেই থেকেই।
উমেদ আলীর সাথে বিচারে নিষ্পত্তি হওয়া ঘটনার ক্ষোভ লালন করে হারুণ গুষ্টির উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয় দড়িকুষ্টিয়া গ্রামের ফজলুল হক গুষ্টি। ফজলুল হক উমেদ আলীর পালিত চাচা বলে জানা গেছে। প্রতিশোধ নিতে ফজলুল হক গংদের বাড়ির কাছে হারুন অর রশিদ গংদের ৭০ একর ফসলি জমিতে ক্ষয়ক্ষতির তান্ডব শুরু করে। কৃষি নির্ভর হারুন অর রশিদ গং শহরে তেমন না আসলেও নগরীর কলেজ রোডের একটি ঘটনায় তাদের জড়িত করে মামলা দেয় ফজলুল হকের মেয়ে তসলিমা খাতুন। তবে এ মামলাটি মিথ্যা প্রমান হওয়ায় ফাইনাল রিপোর্ট দেয় তদন্তকারী অফিসার।
চক শ্যামরামপুরে বাদীর জমির পাকা ধান কাটতে দিচ্ছেনা আসামি পক্ষ। মামলা তুলে না নিলে ধান কাটতে দেয়া হবে না, এমন শর্তে চাপ চলছে মিমাংসার! সম্প্রতি ধান কাটতে লেগে সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে অসহায় বাদীপক্ষ প্রানভয়ে চলে আসে। এর আগে কৌশলে বাদী পক্ষের ধান কাটার ভিডিও তুলে রাখে আসামি পক্ষ। যাতে পুলিশকে দেখানো যায় বাদীপক্ষ তাদের জমির ধান কেটে নিয়ে গেছে। চক শ্যামরামপুরের কৃষক হারুন গংদের উপর অত্যাচারের এ ঘটনাটি ময়মনসিংহের সচেতন মহলকে হতবাক করলেও পুলিশ নির্বিকার বলে মন্তব্য চলছে।
সূত্রমতে, গত ২ মাসে গুরুতর আহত করাসহ লুটপাটের ৪ টি মামলা হলেও ঘটনাস্থলে যাতায়াতে ব্যবস্থা রাখাপ থাকায় আসামিদের আইনের আওতায় আনতে পরছেনা পুলিশ। এ সুযোগে আসামি পক্ষ আইন ভাঙ্গার অনিয়মকে নিয়মে পরিনত করেই চলছে। “একের পর এক ঘটনায় কায়েম করেছে সন্ত্রাসী প্রভাব বিস্তারের রামরাজত্ব। অবস্থানগত ব্যর্থতায় সেখানকার আইনশৃঙ্খলা অবনতি বা যেকোন অঘটনের জন্য কে দায়ী হবে? এমন প্রশ্ন চলছে সচেতন মহলে।”
প্রথমে পরিবার, পরে গুষ্ঠিগতভাবে চক শ্যামরামপুর ও চর দড়িকুষ্টিয়া গ্রামের বিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। মুলতঃ চক শ্যামরামপুর বাদী পক্ষের প্রায় ৭০ একর ফসলি জমি আসামি পক্ষের বাড়ি সংলগ্ন নদী পাড়ে হওয়ায় বেআইনি সুযোগ নিচ্ছে তারা। সন্ত্রাসীদের বাধায় বাদীরা তাদের জমির ফসল ঘরে তুলতে পারছেনা, উপরন্তু তাদের ফসল লুটপাট করে কেটে, গরু-ছাগল দিয়ে খাইয়ে নষ্ট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মৌসুমের সবজি, ধানসহ ৭০ একর জমির ৫০ লাখ টাকার ফসল নষ্ট করা হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগ দেয়া হয় কোতোয়ালী থানায়। ৬ জুন একটি মামলা এফআইআর হয়েছে। মামলা নং-২। এছাড়াও বাদীপক্ষের তিন জনকে প্রাণঘাতি হামলায় গুরুতর আহত করায় পৃথক তিনটি মামলাও হয়েছে। কোতোয়ালি থানার মামলা নং যথাক্রমে – ৩,তারিখ ৪ এপ্রিল, ৩১, তারিখ ২০ এপ্রিল, ১৭, তারিখ ৯ মে।
অসহায় কৃষক পরিরাটি জানায়, পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগে বা মামলায় আসামি পক্ষের কাউকেই আইনের আওতায় আনতে না পারায়, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। বর্তমানে বাদীপক্ষের অবশিষ্ট দেড় একর জমির পাকা ধান জমিতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। “বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন অবগত থাকলেও অনেকটা নির্বিকার। তারা মিমাংসার পথ খুজছে।”